শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:১৬ পূর্বাহ্ন
অনলাইন ডেস্ক:ঈদে মুক্তি পেয়েছে ‘আহত ফুলের গল্প’, তবে প্রেক্ষাগৃহে নয়। ছবিতে তথাকথিত সুপারস্টার নেই। ছবিটি ভিনদেশি কোনো গল্পের নকলও নয়। একেবারে দেশীয় গল্পের ছবি। তবু বাংলা চলচ্চিত্রের এই দুর্দিনে উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করলো ছবিটি। সংবাদপত্রেও ছবিটি নিয়ে রীতিমত হইচই। যে ছবির মাধ্যমে চলচ্চিত্রাঙ্গনে সাড়া ফেললেন একজন তরুণ নির্মাতা। অন্তু আজাদ।
‘জান্নাত’,‘ক্যাপ্টেন খান’ ও ‘মনে রেখো’র মতো তারকা নির্ভর ছবি মুক্তি পেয়েছে ঈদুল আযহায়। দেশের সব প্রেক্ষাগুলোতে ঈদের দিন থেকে চলছে ছবিগুলো। কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ঈদে মুক্তিপ্রাপ্ত এই ছবিগুলো নিয়েই সবার মুখে মুখে আলোচনা থাকার কথা। কিন্তু এবার এক ভিন্ন চিত্রের দেখা মিললো। চলচ্চিত্রের মানুষসহ সোশাল মিডিয়াতেও দেখা গেল এমনটা! ঈদের ছবি নিয়ে সবাই কথা বলছেন সত্য। তবে সেটা ‘জান্নাত’,‘ক্যাপ্টেন খান’ কিংবা ‘মনে রেখো’ নিয়ে যতোটা তারচেয়ে ঢের বেশি সবার মুখে ‘আহত ফুলের গল্প’র নাম! চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ঠ বিভিন্ন গ্রুপেও ছবিটি নিয়ে প্রশংসা ছিলো চোখে পড়ার মতো।
ঈদে মুক্তি পাওয়া এফডিসি নির্ভর ছবিগুলো নিয়ে যখন বিভিন্ন রিপোর্টে উঠে আসছে হতাশ হল মালিকদের কথা। তার বিপরীতে একজন স্বাধীন চলচ্চিত্র নির্মাতা সীনা টান করে বলছেন, ‘ছবি নিয়ে আমি সন্তুষ্ট’!
হ্যাঁ, প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি না দিয়েও ঈদে নিজের ছবির ব্যবসা নিয়ে চ্যানেল আই অনলাইনের কাছে সন্তষ্টি প্রকাশ করেছেন ‘আহত ফুলের গল্প’ নির্মাতা অন্তু আজাদ।
বিকল্প ব্যবস্থায় ঈদের দিন থেকেই রাজধানী ঢাকা থেকে কয়েকশো মাইল দূরে পঞ্চগড় জেলার দেবীগঞ্জ উপজেলায় ছবি দেখানোর ব্যবস্থা করেছিলেন তিনি। টানা দুই সপ্তাহ ছবিটি চালিয়েছেন অন্তু। নিজের ছবির প্রচারণা থেকে শুরু করে একেবারে টিকেট বিক্রি পর্যন্ত নিজের হাতেই করেছেন। যার ফল পেয়েছেন হাতেনাতে!
ছবিটি দেখতে প্রতিদিন পুরুষদের পাশাপাশি প্রচুর নারী দর্শকেরও সমাগম ছিলো বলে জানিয়েছেন নির্মাতা
মফস্বলের মতো জায়গায় বাংলা সিনেমা দেখতে দর্শক আসবে না বলে যারা সন্দিহান ছিলেন, তাদেরকে চ্যালেঞ্জ করেই যেন তা বাস্তবে করে দেখালেন অন্তু। কতোটা সফল হলেন তিনি? এমন প্রশ্নে নির্মাতার সোজাসাপ্টা উত্তর, তার প্রমাণতো ছবিটির টানা ১৪দিন প্রদর্শনী-ই!
নিজের এলাকা বলে একটু বেশি সুবিধা পেয়েছেন। তবে এতো সাড়া পাবেন ভাবেননি অন্তু নিজেও। তবে বিশ্বাস ছিলো, বাঙালি সিনেমা দেখা ভুলে নাই। ঠিকঠাক ভাবে তার সামনে তার নিজের গল্পটা তুলে ধরতে পারলে অবশ্যই দর্শক তা লুফে নিবে।
ঈদের দিন থেকে টানা দুই সপ্তাহ মফস্বলে ছবিটি দেখিয়েছেন অন্তু আজাদ। শুধু দেবীগঞ্জ উপাজেলায় নয়, ছবিটি দেখতে আশপাশের অঞ্চলতো বটেই প্রতিদিন দূর দূরান্ত থেকেও লোকজন এসেছে বলে জানিয়েছেন নির্মাতা। তিনি বলেন, প্রতিদিন ৪০-৫০ কিলোমিটার দূর থেকে ‘আহত ফুলের গল্প’ দেখতে কেউ না কেউ এসেছেই। এটা আমার জন্য অত্যন্ত গর্বের।
দেবীগঞ্জ উপজেলা শহরে কোনো সিনেমা হল নেই। একটি হল ভাড়া করে গ্রাম থেকে এসে প্রতিদিন নিজের প্রজেকশন ব্যবস্থায় দর্শকদের দেখিয়েছেন ‘আহত ফুলের গল্প’। মুক্তির প্রথম সপ্তাহে প্রায় প্রতিদিনই শো’গুলো হাউজফুল ছিলো। তবে দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে দর্শক কিছু কমতে শুরু করে। তার মতে, দ্বিতীয় সপ্তাহে গড়ে প্রতিদিন দুইশো মানুষ ছবিটি দেখে।
ছবি দেখার পর দর্শকের প্রতিক্রিয়া কেমন ছিলো? জানতে চাইলে তরুণ এই নির্মাতা বলেন, বেশির ভাগ দর্শকই ছবিটি প্রশংসা করেছেন। পরিবার নিয়ে এসে লোকজন ‘আহত ফুলের গল্প’ দেখেছেন। এটা নিয়ে তাদের তৃপ্তির কথাও ছবি দেখার পর আমাদের জানিয়েছেন অনেকে। ছবিটিকে তারা নিজেদের ভাষায় সামাজিক গল্পের ছবি হিসেবে ট্রিট করেছেন। অনেকে বলেছেন, ১০ বছর ১৫ বছর পর হলে গিয়ে এভাবে ছবি দেখলেন। এটা আমার জন্য অত্যন্ত গৌরবের ব্যাপার। তারচেয়ে বড় বিষয় হলো, যে পরিমাণ দর্শক এই ছবিটি দেখেছেন তারমধ্যে ১০ শতাংশ ছবিটি রিপিট দেখেছেন! অনেকে তিনবার, চারবারও দেখেছেন।
দর্শকের সাথে নির্মাতা অন্তু আজাদ
দেবীগঞ্জে ছবিটি দর্শকদের ১৪ দিন দেখানোর টার্গেট ছিলো। এটা শেষ হলো। এবার তাহলে ছবিটি নিয়ে কী করবেন?-এমন প্রশ্ন অন্তু আজাদ জানান, চট্টগ্রাম প্রকৌশলী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে কথা হয়েছে। তারা এই ছবিটির শো করতে চায়। দুয়েক দিনের মধ্যে চুয়েটে দেখানোর তারিখ ফাইনাল হয়ে যাবে। এছাড়া বাংলাদেশ শিল্পকলার সাথে চুক্তিতে যাচ্ছি। তাদের সাথে মিলে ছবিটি দেশব্যাপী দেখানোর পরিকল্পনা আছে।
Leave a Reply